रविवार, 30 जनवरी 2022

জীবনানন্দের পাঁচটি প্রেমের কবিতা

 

                  

জীবনানন্দের পাঁচটি প্রেমের কবিতা

 

 

বনলতা সেন

 

"বনলতা সেন" কবিতাটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু তার কবিতা পত্রিকায়। ১৩৪২ পৌষ সংখ্যার মাধ্যমে বনলতা সেন সর্বপ্রথম পাঠকের হাতে এসে পৌঁছায়। কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ১৩৪৯ সালে প্রকাশিত তার বনলতা সেন নামক তৃতীয় কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন। কবিতা-ভবন কর্তৃক প্রকাশিত এক পয়সায় একটি গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে।কবির জীবদ্দশায় বাংলা শ্রাবণ, ১৩৫৯ সালে কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। 

আপাত দৃষ্টিতে 'বনলতা সেন' একটি প্রেমের কবিতা যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বনলতা সেন নামী কোনো এক রমণীর স্মৃতি রোমন্থন। শুরু থেকেই পাঠকের কৌতূহল বনলতা সেন কী বাস্তবের কোনো নারী নাকি সম্পূর্ণ কল্পিত একটি কাব্যচরিত্র। কবিতার তিনটি স্তবকের প্রতিটির শেষ চরণে বনলতা সেন নামের এক নারীর উল্লেখ আছে।

 প্রথম স্তবকে হাজার বছর ব্যাপী ক্লান্তিকর এক ভ্রমণের কথা বলেছেন কবি : তিনি হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে ফিরেছেন;- যার যাত্রাপথ সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগর অবধি পরিব্যাপ্ত। তার উপস্থিতি ছিল বিম্বিসার অশোকের জগতে যার স্মৃতি আজ ধূসর। এমনকী আরো দূরবর্তী বিদর্ভনগরেও স্বীয় উপস্থিতির কথা জানাচ্ছেন কবি। এই পরিব্যাপ্ত ভ্রমণ তাকে দিয়েছে অপরিসীম ক্লান্তি। এই ক্লান্তিময় অস্তিত্বের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য শান্তির ঝলক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বনলতা সেন নামের এক রমণী। কবি জানাচ্ছেন সে নাটোরের বনলতা সেন।

 

দ্বিতীয় স্তবকে বনলতা সেনের আশ্চর্য নান্দনিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন কবি। বনলতা সেনকে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন অন্ধকারে। তার কেশরাজি সম্পর্কে কবি লিখেছেন : "চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা"; মুখায়ব প্রতীয়মান হয়েছে শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মতো। বনলতাকে দেখে গভীর সমুদ্রে হাল-ভাঙ্গা জাহাজের দিশেহারা নাবিকের উদ্ধারলাভের অনুভূতি হয়েছে কবির, যেন একটি সবুজ ঘাসের দারূচিনি দ্বীপ সহসা নাবিকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বনলতা সেনও তার পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়ময় চোখ দুটি তুলে জানতে চেয়েছে, "এতদিন কোথায় ছিলেন?"

তৃতীয় স্তবকটি স্তগতোক্তির মতো মৃদু উচ্চারণে একটি স্বপ্ন-উণ্মোচনের কথা শোনা যায়। কবি জানাচ্ছেন (হেমন্তের) দিন শেষ হয়ে গেলে সন্ধ্যা আসে, ধীরে, ধীরলয়ে শিশিরপাতের টুপটাপ শব্দের মতো। তখন (দিনভর আকাশচারী) চিলের ডানা থেকে রোদের গন্ধ মুছে যায়। সময় পাখিদের ঘরে ফিরে আসার তাড়া; এসময় (যেন) সব নদীরও ঘরে ফেরার ব্যাকুলতা। পৃথিবীর সব আলো মুছে যায়; অন্ধকারে কেবল কয়েকটি জোনাকি জ্বলে। সারাদিনের জাগতিক সব লেনদেন সমাপ্ত হয়েছে; গল্পের পাণ্ডুলিপি তৈরি; তখন (কেবল) অন্ধকারে বনলতা সেনের মুখোমুখি বসে গল্প করার অবসর।

 

শিকার

জীবনান্দ দাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মানুষের জীবনের নিষ্ঠুরতাকে শিকার কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবিতাটি রূপকের আড়ালে মানুষকে নির্দেশ করেছে বারবার। কবিতার পটভূমি টিকে শান্ত মলিন করে তোলার জন্য তিনি সবুজ ভোরকে অবলম্বন করেছেন, যেখানে ঘাসফড়িঙের রং, টিয়ার সবুজ পালক, আর গাছের কচি পাতা রূপকের মত প্রকৃতিকে শান্ত করেছে।

সকালবেলার আলো তে যখন চারিদিকে শান্ত ঠিক তখন হিংস্র বন্যের হাত থেকে প্রাণ বাঁচালো এক হরিণ রাতের সব ক্লান্তিকে দূর করার জন্য নদীতে নামে। সে চেয়েছিল জীবনের এক দন্ড শান্তি আর বেঁচে থাকার জন্য একটুখানি নিরাপদ পৃথিবী 

ভোর বেলায় হরিণটি বাতাবি লেবুর মত কচি ঘাস ছিড়ে খাচ্ছিল, তারপর শরীরকে একটু আবেশ দেওয়ার জন্য সে নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে নামে। হরিণটি যখন নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে স্নানে মগ্ন ঠিক তখন কবি শুনতে পান বন্দুকের আওয়াজ। নিভে যাই হরিণের জীবনের সমস্ত উল্লাস, স্নিগ্ধ নদী হয়ে যায় মচকা ফুলের মতো

কবি জীবনানন্দ নাগরিক লালসা কে কোনদিন বড় করে দেখেননি। তার কাছে হরিণটি এক জীবন্ত প্রকৃতি, কিন্তু নাগরিক টেরিকাটা মানুষের লালসার কাছে সে শিশিরভেজা গল্প আর সিগারেটের ধোঁয়ার মাঝে ভোগ্যপণ্যে পরিণত হয়েছে।

 

কবিতায় সত্যি যেন প্রকৃতি নাগরিক সমাজের কাছে এক পরাধীন বস্তু। মানুষের লালসার কাছে প্রকৃতি মূল্যহীন, যেকোনো সময় তাকে জীবন দিতে হয় সভ্যের কাছে। প্রশ্নে উদ্ধৃত বক্তব্যটি আমরা শিকার কবিতার একটি স্তবক হিসেবেই ধরতে পারি, কারণ কবিতার বিষয়ের সঙ্গে আলোচ্য মন্তব্য টি যথার্থভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

 

হায় চিল

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরএর ‘অপু’ যেমন নীরবে আত্মস্থ করেছিল প্রকৃতিকে। একইভাবে জীবনানন্দ দাশকেও আমরা নীরব কলমে প্রকৃতির চেনা চিত্রগুলিকে অচেনা দৃষ্টিতে লিখেযেতে দেখি।হায় চিলকবিতাটি তেমনই একটি সৃষ্টি।

যে চিলকে আমরা চিনি শিকারিপাখি হিসেবে, সেও যে কাঁদতে পারে তা জীবনানন্দ প্রথম আমাদের বললেন-

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে !
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে !
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে ;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে !
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে !

অর্থাৎ, কবি এই কবিতায় চিলের যে নবায়ন করলেন সেটি আমাদের চেনা চিলের বাইরে সম্পূর্ণ একটি বিপরীত সত্তা। বৈপরীত্য দেখানোই জীবনানন্দের সহজাত ধর্ম, তবে এই বৈপরীত্য সূচক বিরহী সত্তাটি পাঠকের মনকে দখল করে বসে। সুধু দখল নয়, পাঠক নিজেকে দেখতে পায় কবির প্রতিবিম্ব রূপে। আর এটিই হল শ্রেষ্ঠ কবি কবিতার বশীভূতকরণ মন্ত্র।

কবিতাটি মাত্র আট পংক্তির একটি বহুপদী কবিতা। পর্ব মানে চরণের পর্ব নয়, কবিতার অন্তধয়িত ভাব রূপকল্পের পর্ব। কবিতায় প্রথম পর্বটি প্রায় অদৃশ্য। এটি একটি রূপকথা কবির আবেগ থেকে লেখা। এতে আছে রাজা, রানী, রাজকুমার রাজকুমারীর কাহিনির আভাস- রূপকথার রাঙা রাজকুমারী, যে ছেড়ে চলে গেছে বিরোহী রাজকুমারকে। কবি সেই ব্যর্থ রাজকুমারের মধ্যে নিজের সত্তাকে স্থাপন করেছেন।

যে বোধ নিয়ে কবি জীবনানন্দ এই কবিতাটি পড়েছিলেন। অনুবাদ করার ক্ষেত্রে সেই বোধ তার কাজ করেনি। বরং কবিতাটিকে কবি নিজের করে নিয়েছেন। বলাযেতে পারে র্পূবজ কবির থেকেও তিনি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন হায় চিল কবিতায়। কেননা প্রথম কথা, ‘কারলিউ’ আর ‘চিল’ এক নয়। কারলিউ জলাভূমিততে মাছ শিকারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা-ঠোঁটওয়ালা বক বা সারস জাতীয় পাখি।

কবি ইয়েটসকে অনুসরণ না করে ইয়েটসের কবিতাটিকে পুন:সৃষ্টি করলেন। ফলে মূল ছয় পঙক্তির কবিতাটি বেড়ে হলো আট পঙক্তির, আর যুক্ত করা গেল কিছু নতুন অনুষঙ্গ যেমন : সোনালীডানা’, ‘ভিজে মেঘের দুপুরে, ধানসিঁড়ি নদী, বেতের ফল, রাঙা রাজকন্যা, হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানো সবশেষে প্রথম পঙক্তিদ্বয়কে পুনরাবৃত্ত করিয়ে কবিতার বানী উপলব্ধিতে একটি ঘুমন্ত অর্থহীনতার আবহ তৈরি করলেন কবি।

আসলেএকজন সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যেমন নতুন কবিতা লেখা যায়, তেমনি একটি নিটোল কবিতার প্রেমে পড়েও অনুরূপ আরেকটি নতুন কবিতা রচনা করা যায়, যা মৌলিকত্বের দাবিদার হতে পারে। ‘চিল’ বন্যপ্রাণী, পোষ মানে না। কিটস্এর পাখির- ঘরে ফেরার টান থাকে’, উইলিয়াম ওরাডসওয়ার্থএর পাখির তা থাকেনা। ইয়েটস এর অনুসরণে চিলকে বৈপরীত্য দান করে, সুরিয়ালিস্টি জীবনানন্দ এই দুই ভিন্ন পন্থারি আসলে আশ্চর্য রকম ভাবেই মিল ঘটাতে চেয়ে ছিলেন একমগ্ন দুপুরে বসে


সুচেতনা

সুচেতনাকবিতাটি জীবনানন্দ দাশেরবনলতা সেন’ (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।সুচেতনাজীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা কবিতায় সুচেতনা সম্বোধনে কৰি তীর প্রার্থিত, আরাধ্য এক চেতনানিহিত বিশ্বাসকে শিল্লিত করেছেন।

সুচেতনা এই 'সু' উপসর্গ এবং 'চেতনা' ধ্বনিদুটিকে পাশাপাশি অনল এক নারীর ছবি ভেসে ওঠে। নারীর পাখির নীড়ের মতো চোখ আছে কিনা তা জানা নেই, কিন্তু কবি বনলতার মতো সুচেতনাকেও দারুচিনি বনানীর ফাঁকেই স্পর্শসুখ অনুভব করেছেন। সুচেতনা একটা গুণবাচক বিশেষ্য হলেও তার পরেই এসেছে কমা (,) অর্থাৎ অল্পবিরতি নিয়ে যখন তিনি তুমি উচ্চারণ করলেন তখন বোঝা যায় সুচেতনা নারী। সুচেতনার শরীরে নারীদেহের প্রাণ সঞ্চার করার পর বললেন তা দূরতর দ্বীপ। এসে গেল সজীব পদার্থের ওপর অচেতন বস্তুর ধর্মের আরোপ। আর সেই দ্বীপ নির্জনতা দিয়ে ঘেরা, যা দূর নক্ষত্রের কাছে আরও দূরতর। শক্ত ইমারতের প্রাচীরে যে যান্ত্রিক সভ্যতা বদ্ধ তার মুক্তি কামনাতেই। সেই নির্জন দ্বীপের খোঁজ যেখানে মানুষ থাকবে, আর থাকবে মানবিক বোধ। দ্বিতীয় স্তবকের দ্বিতীয় বাক্যে পৃথিবীর গভীরতর অসুখের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অসুখ ব্যক্তির স্তরে সীমাবদ্ধ নয় তা বুঝিয়ে দেওয়া হল পরের স্তবকে। সেখানে আমাদের কথা এল। এখানে বলা হল যারা ফসল ফলায় তারাই শোষিত হতে থাকে বারবার, ‘আগণন মানুষের শবসেই কথাই আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আবার বুদ্ধ, কনফুসিয়াস শব্দ প্রয়োগ করে সেই প্রাচীন পটভূমিতে তুলে আনলেন। বুঝিয়ে দিলেন প্রেমের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন যারা তাঁদের পৃথিবীতে এখন প্রেম মিথ্যা। বললেনআমাদের পিতা বুদ্ধ, কনফুসিয়াসের মতো আমাদের প্রাণ। সুমুক করে রাখে এছাড়াও এখানে বৈপরীত্য নজরে আসে। একদিকেশস্যযা জীবনের প্রতীক, আর অপরদিকে 'শব' যা মৃত্যু। আবারস্বর্গের বিস্ময়' শব্দটিতে পুনর্বার বাঁচার আসা। শস্য ক্ষণিকতাকে ধারণ করেকিন্তু তা স্বর্গওবটে এখানেই তার স্থায়িত্ব। বারবারতবুঅব্যয় ব্যবহার করেযান্ত্রিক সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করেছেন। চতুর্থ স্তবকে নাবিকঅস্তিম প্রভাতের' উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। আবার শেষ স্তবকেও এল বৈপরীত্য—

কখনও বললেন- ‘না এলেই ভালো হত আবার পরক্ষণেই- ‘এসেই যে গভীরতর লাভ হল’  এইভাবে নানা বৈপরীত্যের সমন্বয়ে কবিতাটি সামগ্রিক রসাবেদন সৃষ্টি করেছে। আর সুচেতনা সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করে অনন্ত সূর্যোদয়ের চেতনা আনে; শেষ হল তাই আশাবাদের ঘোষণা করে।

সুচেতনা কবিতার সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে এটা বোঝা গেল সুচেতনা কোনো বিশেষ নারী নয়। আমাদের সত্তার ভেতরে যে সু-চেতনার বোধ জন্ম দেয় সেই সুচেতনা নারী হতে পারে। তবে সেই সুচেতনা অবশ্যই শুভ প্রবৃত্তির প্রতীক। 'সুচেতনা' শব্দটি দুইবার মাত্র উচ্চারিত হলেও কবি সমগ্র কবিতার পাদপ্রদীপে তাকে শাশ্বত জীবনবোধে উন্নীত করে দিয়েছেন।

 

কুড়ি বছর পরে

কবিতাটার নামকুড়ি বছর পরে কিন্তু তিনি শুরু করলেন একটু ভিন্ন ভাবে। সরাসরি না বলে আক্ষেপ আশা মিলিয়ে বললেনআবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!’ একই পঙক্তি পুনরোচ্চারণ করলেন তারপরে কোথায় আবার দেখা হতে পারে তার বর্ণনা করলেন। এই বিবরণের মাধ্যমে জীবনানন্দ দেখালেন ছন্দের জাদু। প্রথম পঙক্তি যেখানে শেষ হয়েছে সংক্ষেপে, সেখানে এই বর্ণনাকে নিয়ে গেলেন কয়েক লাইনে।আবার বছর কুড়ি পরে সাথে অন্ত্যমিল দিলেন কবিতার এই অংশের শেষে গিয়ে যাতে পাঠ করে যাওয়াতে কোথাও কেটে না যায়। এর মধ্যে যদির সাথে মিল ঘটালেন নদীর, পাশের সাথে মাসের। কিন্তু মিল দিলেন ঢিলাঢালা ঢেউ খেলানো ভাবে। কোথাও সামান্য জোর করলেন না। এমন ভাবে লিখলেন যে পাঠকের সেই মিলগুলোর দিকে নজরের প্রয়োজন পড়ে না। পাঠকের নজরে আসে শুধু তার তৈরি করা অপূর্ব দৃশ্যগুলো -সন্ধ্যার কাকের ঘরে ফেরা আর হলুদ নদীর নরম নরম হবার।

কিন্তু তিনি সেখানেই থামলেন না। যে দৃশ্য তৈরি করলেন জীবনানন্দ, কবিতার পরের অংশে এসে সেই দৃশ্যকে বদল করে দিলেন। বললেন হয়তো কার্তিক নয়, তখন হয়তো ধান কাটা হয়ে গেছে। সেই ধানের খড়ে হয়তো ভরে গেছে হাসের, পাখির নীড়। এই স্তবকগুলো জীবনানন্দ লিখলেন আগের স্তবকগুলো থেকে ভিন্ন করে। অন্ত্যমিলগুলো এখানে সহজে দেখা গেলেও ঢেউ খেলানো ভাবটা সেখানে নেই। বরং এই অংশটা লেখা নিস্তরঙ্গ ভাবে।

এর পরের স্তবকগুলোতে জীবনানন্দ অন্ত্যমিলকে ব্যবহার করলেন আরো দুর্বল করে। কিন্তু পঙক্তিগুলো এখানে নিস্তরঙ্গ নয়। চাঁদকে মিলিয়ে বাংলা কবিতার এক অবিস্মরণীয় দৃশ্যের জন্ম দিলেন। লিখলেন চাঁদ এসেছে একরাশ পাতার পিছনে সরু সরু ডালপালা মুখ নিয়ে। চাঁদ নিয়ে এরকম একটা দুইটা পঙক্তির কারণে বাংলা কবিতায় কয়েকজন কবি স্মরণীয় হয়ে আছেন। কিন্তু জীবনানন্দের এই পঙক্তিটা তেমন নজরে আসে না কারণ তিনি এরকম অবিস্মরণীয় দৃশ্যের জন্ম দিয়ে গেছেন আরো বহুবার। এই অংশটা তিনি শেষ করলেন সংশয়ের মধ্যে। বললেন কুড়ি বছর পরে হয়তো যার সাথে দেখা হবে তাকে মনেও থাকবে না। এই সংশয় প্রকাশের মধ্যে কবি ভেঙ্গে দিলেন রোমান্টিকতায় আতিশয্যকে।

শেষের অংশে কবির তৈরি করা শীত তীব্রতর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা শেষে রাত গভীর হতে থাকে। অন্ত্যমিল দেয়া ঢেউ খেলানো অসম দৈর্ঘ্যের পঙক্তির মাধ্যমে জীবনানন্দ আবার তৈরি করেন অপূর্ব দৃশ্যমালা। সেখানে চোখের পাতার মতো করে চিলের ডানা থামে কোন অজানা অন্ধকারে। সোনালী চিলকে সেখানে শিশির শিকার করে নিয়ে যায়। পেঁচা সেই অন্ধকারে মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে নামে। সেই কুয়াশার জীবনানন্দ অপেক্ষা করেন কুড়ি বছর পরে আবার তার সাথে দেখা পাওয়ার আশায় – ‘কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!’ সরলরৈখিক কবিতা হলেও, কবি সেভাবে শুরু করেছিলেম কবিতাটার শেষও সেভাবে টানলেন। কিন্তু বৃত্তের মতো একবিন্দুতে না ফিরে, প্রথম শেষ পঙক্তি কবিতায় সহাবস্থান করে সমান্তরালে। কুড়ি বছর পরে কথাটা কবিতাটায় বারবার ফিরে ফিরে আসলেও ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে। কবিতার আশাবাদী উত্তরণ ঘটে শেষ পঙক্তিতে

এভাবে কুড়ি বছর পরে কবিতার সমাপ্তি আসে। কবির আক্ষেপ আর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পাঠক একাত্ম হয়ে পড়েন। একের পর এক তৈরি করা দৃশ্যগুলো তৈরি করে ঘোর। সে একাত্মতা আর কবির কাব্যজাদুর ঘোরে শেষ হয় আমার এক বিলিয়ন একতম পাঠ।

 

 Download pdf

আমাদের লেখা আপনাদের ভালো লাগলে শেয়ার ও লাইক করবেন। আমাদের সাথে যুক্ত হতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

WWW.EVERYTHING0365.BLOGSPOT.COM





कोई टिप्पणी नहीं:

एक टिप्पणी भेजें

If you have any doubts, let me know or write us Kajemshaikh0365@gmail.com

Featured Post

सामान्य हिंदी की तैयारी Samanya Gyan लुसेंट सामान्य हिंदी PDF सामान्य हिंदी के 51 महत्वपूर्ण प्रश्न Samanya Gyan ke prashn सामान्य हिंदी व्याकरण

सामान्य हिंदी की तैयारी Samanya Gyan लुसेंट सामान्य हिंदी PDF सामान्य हिंदी के 51 महत्वपूर्ण प्रश्न Samanya Gyan ke prashn सामान्य हिंदी व्य...