প্যারাডাইস লস্ট
১৬৫৮-১৬৬৫ এই দীর্ঘ সাত বছর ধরে মিল্টন রচনা করেন তার শ্রেষ্ট মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট। এটি প্রকাশিত হয় ১৬৬৭ তে। ১২ টি সর্গে বিভক্ত মহাকাব্য টি ইংরেজী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য।পৃথিবীর প্রথম মানব আদম ও ইভ শয়তানের প্ররোচনায় কিভাবে জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়ে স্বর্গ চ্যুত হলো তাই ই এই মহাকাব্যের মূল বিষয়।
কাব্যটির যবনিকা উত্তোলিত হয়েছে নরকে, যেখানে শয়তান ও তার সহচররা নির্বাসিত। সে আদম ও ইভের মধ্যে পাপের প্রবেশ ঘটিয়ে ঈশ্বরের উপর প্রতিশোধ নিতে চাই। দ্বিতীয় সর্গ তে শয়তান রা সভা করে ও নির্ধারিত হয় যে আদম ও ইভকে প্রলুব্ধ করবে। তৃতীয় সর্গে ঈশ্বর শয়তানের কথা জানতে পারলে তাকে সতর্ক করে। যিশু ঈশ্বরকে জানালেন মানুষ যদি কোনো পাপ করে তবে তাদের জন্য তিনি প্রায়শ্চিত্ত করবেন। চতুর্থ সর্গে মনোহর ইডেনের বর্ণনা, যেখানে ইভ ঘুমিয়ে আছে এবং একজন দেবদূত তাকে পাহারা দিচ্ছে। পঞ্চম সর্গে ঘুম ভাঙ্গার পর ইভ তার স্বপ্নের কথা আদমকে বলে । ষষ্ট সর্গে শয়তানের বিদ্রোহের বিবরণ আছে। সপ্তম সর্গে রাফেল তাদের শোনালেন বিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস। অষ্টম সর্গে শোনালেন আদম ও ইভের পরস্পর মিলিত হওয়ার ইতিবৃত্ত । নবম সর্গে শয়তান আদম ও ইভকে প্রলুব্ধ করে ফেললো । দশম সর্গে ঈশ্বর আদম ও ইভকে শাস্তি দিলেন । কারণ যথেষ্ট জ্ঞান থাকা সত্বেও তারা ঈশ্বরের নিয়ম ভঙ্গ করেছে । এদিকে আপন উদ্দেশ্য পূরণ করার পর শয়তান নরকে চলে গেলো। আদম ও ইভ তাদের ভুলের জন্য অনুতাপ করতে লাগলো । কিন্তু ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করলেন না। একাদশ সর্গে আদম ও ইভ্কে সর্গ থেকে বিদায় করা হলো। দ্বাদশ সর্গে তারা এই ভেবে আশ্বস্থ হলো যে, তাদের বংশধর রা একদিন এই পাপ থেকে মুক্তি পাবে ।
এই মহাকাব্যের কাহিনী বিন্যাস খুব বিশাল, নরকে কানিহির শুরু, মধ্যভাগ স্বর্গে ও অন্ত ভাগ মর্তে। প্রত্যেকটি চরিত্র নিজ নিজ স্বাধীন ভূমিকায় আছে। শয়তান চরিত্র চিত্রণে মিল্টন আশ্চর্য সাফল্য পেয়েছেন। মিল্টন এতে ব্যাবহার করেছেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ । মহা কাব্যিক গাম্ভীর্য - ব্যাপ্তি - বিশালতা এবং গভীরতার পক্ষে এ ছন্দ অত্যন্ত উপযোগী। তিনি সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, কুহেলিকা , পর্বত, আলেয়া ইত্যাদি উপমা বারবার ব্যাবহার করেছেন । তাছাড়া এই কাব্যে পিউরিট্যান, ধির্মনিষ্ঠা, ক্লাসিক দৃষ্টি ভঙ্গির যেমন লক্ষ করা যায়, তেমনি লক্ষ করা যায় রেনেসাঁসের প্রভাব ও। তবে যায় হোক, প্যারাডাইস লস্ট এর মধ্য দিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে দেশকাল নিরপেক্ষ সেই শাশ্বত সত্য। আর এসত্যের প্রকাশই উন্নত মহাকাব্যের ধর্ম এবং এই ধর্মে প্যারাডাইস লস্ট হয়তো ইলিয়াড কেও পার হয়ে গেছে ।
কাব্যের প্রথম সর্গে রয়েছে পুরনো কাহিনীর জের। শয়তানের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে পৃথিবীর আদিম নরনারী ঈশ্বরের নিষেধ সত্বেও জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়ে পাপের শিকার হলো এবং ঈশ্বর কর্তৃক স্বর্গ থেকে নির্বাসিত হলো। দ্বিতীয় সর্গে বর্ণিত হলো যীশু কিভাবে শয়তানের সমস্ত প্ররোচনা ও প্রলোভন সব জয় করলেন এবং মানুষ কিভাবে স্বর্গে পুনর্গমন করলো। তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গে বর্ণিত হলো যীশুর উপলব্ধি এবং তার ধর্মবানী ব্যপটিজিম এবং যীশু যে ঈশ্বর পুত্র সে ব্যাপারে ঐশী ঘোষণা।
তবে সন্দেহ নাই যে, আকারে এই গ্রন্থ প্যারাডাইস লস্ট এর তুলনায় সংক্ষিপ্ত এবং এর কাহিনীও প্যারাডাইস লস্ট এর মত বিচিত্রিত, বিশাল ও গভীর নয়। এর কাহিনী তেও ঈশ্বর - মানব - শয়তান এর সহবস্থান ঘটেছে। তবে প্যারাডাইস লস্ট এর মত শয়তান এতটা সাহসী ও বিদ্রোহী নয়, এখানে সে কৌশলে ও মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে প্রবঞ্চিত করে। এর ছন্দ অমিত্রাক্ষর । তবে ভাষা শিল্পে একাব্য কারো কারো ধারণায় প্যারাডাইস লস্ট এর চেয়ে সুন্দরতর। তবে ভাবে ও প্রকাশ কলায় পরম সং হতি লাভ করেই প্যারাডাইস রিগেন শিল্প সর্গে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
कोई टिप्पणी नहीं:
एक टिप्पणी भेजें
If you have any doubts, let me know or write us Kajemshaikh0365@gmail.com