শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ বিজ্ঞান কী? এর পরিধি আলোচনা কর। 5+5
[ ] শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ বিজ্ঞান : -
সমাজের মধ্যে প্রত্যেকটি মানুষ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করতে শেখে এবং সেই উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে তার বোধের বিকাশ হয়। সমাজ এবং ব্যক্তির পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি নির্দিষ্ট বিষয়সূচি এবং বিষয়জ্ঞান , যাকে বলা হয় শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব ( Educational Sociology ) ।
●শিক্ষাবিজ্ঞান এবং সমাজতত্ত্ব দুটি পৃথক বিষয়। তবে আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকদের সকলেই যে শিক্ষার সমাজতত্ত্ব আর শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পার্থক্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন তা নয়। যারা দুটি বিষয়কে পৃথক বলে মনে করেন , তারা পার্থক্য নির্দেশ করেছেন শুধুমাত্র গুরুত্বের ভিত্তিতে।
● শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব মিলিতভাবে যে বিদ্যা চর্চার সূচনা করেছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তার তিনটি ভিন্ন অভিমুখ দেখা যায় তিনটি ভিন্ন নামে , -
(i) শিক্ষার সমাজতাত্ত্বিক ভিত্তি ( Sociological Foundation of Education ),
(ii) শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব ( Educational Sociology ) এবং
(iii) শিক্ষা সমাজতত্ত্ব ( Sociology of Education )
●অধ্যাপক Brown বলেছেন শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করে।
●Cook & Cook এর মতে , পার্থিব বিষয়বস্তু এবং মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও কৌশলের প্রয়োজনই হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব।
সুতরাং শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব সম্পূর্ণ সমাজতত্ত্বের একটি বিশেষ দিক যা সামাজিক পটভূমিকায় শিক্ষা প্রক্রিয়ার গঠনগত ও গতিশীল বিষয়গুলি আলোচনা
[ ] শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি: -
শিক্ষা বিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব পরস্পর যুক্ত হয়ে ব্যক্তি ও সমাজের মঙ্গল সাধনে অগ্রসর হয়েছে এবং সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে সুস্থ ও সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। শিক্ষাবিজ্ঞানে কতগুলি নির্দিষ্ট পরিধি আছে আবার সমাজতত্ত্বেরও নির্দিষ্ট পরিধি আছে। উভয় শাখা পরস্পরের সমন্বয়ে তৈরি করেছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ সমাজতত্ত্বের পরিধি। যেমন :-
a) জনসমষ্টি:-
জনসমষ্টি দেশের অন্যতম সম্পদ যার দ্বারা একদিকে যেমন সুস্থ সমাজ তৈরি হয় ও অন্যদিকে তৈরি হয় যথার্থ শিক্ষাব্যবস্থা। তাই শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পরিধির অন্যতম উপকরণ হলো জনসমষ্টি ও তার প্রকৃতিগত উন্নয়ন সংস্থা এবং প্রকৃতিগত উন্নয়ন হল সমস্যা এবং প্রগতিগত উন্নয়ন হল অভিমুখী শিক্ষাভাবনা।
(b) যোগাযোগ ব্যবস্থা:-
যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি উন্নয়নশীল দেশের তৃতীয় প্রধান উপকরণ। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ তত্ত্বের আলোচনাক্ষেত্রে তাই যোগাযোগ ব্যবস্থার যথার্থতা এবং উন্নয়নের আলোচনা করে এই শাখাটি।
(c) ভৌগলিক অবস্থান:-
ভৌগলিক অবস্থান হল একটি দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার সাপেক্ষে আলোচনা , ভাবনা ও অনুকূল পরিবেশের সন্ধান দেয় শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান।
(d) মানবসম্পদ:-
সকল ব্যবস্থাপনার মূলে যে সম্পদ সেটি হল মানবসম্পদ। সুতরাং মানবসম্পদের প্রকৃতিগত দিক বিশ্লেষণ এই শাখার চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ পরিধিযুক্ত বিষয়।
e)সামাজিক মিথস্ক্রিয়া:-
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের অপর একটি পরিধিভুক্ত বিষয় হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া। যার দ্বারা মানুষ দল গঠন করে এবং পারস্পরিক সংগতি বিধান করে। তাই মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতি প্রক্রিয়ার প্রকার সম্পর্কে আলোচনা করে এই বিষয়।
f)সামাজিক গঠন:-
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পরিধি হল সামাজিক গঠন। সমাজ গঠনের প্রকৃতি , নিয়ম , রীতিনীতি , গোষ্ঠীচেতনা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে এই বিষয়টি।
g)গোষ্ঠীজীবন:-
সামাজিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি গোষ্ঠীজীবনের বৈশিষ্ট্য , প্রকৃতি এবং তাৎপর্য আলোচনা করে শিক্ষাবিজ্ঞানের সাপেক্ষে।
h)গণতান্ত্রিক ভাবধারা:-
সমাজ জীবনে গণতান্ত্রিক ভাবধারার বিন্যাস এবং প্রবাহকে পরিচালিত করার মূলনীতি আলোচনা /
আধুনিক অর্থে শিক্ষাকেও সামাজিক প্রক্রিয়ারূপে বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষা-প্রক্রিয়ায় সামাজিক প্রক্রিয়ার মতাে সমস্ত বৈশিষ্ট্যই বর্তমান। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
[1] সামাজিক সম্পর্ক : সমাজজীবনে একজন মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের মিথস্ক্রিয়ার ফলে সম্পর্ক তৈরি হয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও ছাত্রদের মধ্যে, শিক্ষকদের মধ্যে এবং ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
[2] সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া : সমাজজীবনের মতাে শিক্ষাজীবনেও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াগুলি পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়। একের পর এক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।
[3] সামঞ্জস্যপূর্ণতা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য : সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলির মতাে শিক্ষার্থীর শিক্ষা-প্রতিক্রিয়াগুলিও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং লক্ষ্য-অভিমুখী।
[4] সামাজিক অগ্রগতি : সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন সমাজের অগ্রগতি হয়, শিক্ষার মাধ্যমেও তেমনি
সমাজের অগ্রগতি ঘটে।
[5] অভিন্ন প্রক্রিয়া : সমাজের মধ্যে যেসব আন্তঃক্রিয়া-মূলক প্রক্রিয়া দেখা যায়, শিক্ষার মধ্যেও সেইসব প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়। যেমন—সহযােগিতা, বিরােধিতা, প্রতিযােগিতা, সহাবস্থান, সমন্বয় এবং আত্মীকরণ।
[6] সামাজিকীকরণ : শিক্ষা শিশুর সামাজিকৌকরণে সাহায্য করে। শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সামাজিক রীতিনীতি, আদবকায়দা, প্রথা, ঐতিহ্য, মূল্যবােধ, বংশপরম্পরায় সঞ্চালিত হয়। এই ভাবেই শিশু সমাজের একজন সভ্য হয়ে ওঠে।
সুতরাং, ওপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। বস্তুতপক্ষে সমাজের প্রয়ােজনেই শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়।
শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান এবং শিক্ষার সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য ?
[ ] সমাজবিজ্ঞান :-
নতুন প্রজন্মকে সামাজিক শৃঙ্খলা মেনে চলার এবং এটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা হিসাবে শিক্ষা যে কোনও সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজবিজ্ঞান যেহেতু মূলত মানব সমাজের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, তাই শিক্ষা এর অন্যতম প্রধান উদ্বেগ। কথিত আছে যে এমিল ডুরখাইম ছিলেন অগ্রণী ব্যক্তি যিনি শিক্ষার সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতিগত অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। এই ক্ষেত্রটি প্রাথমিকভাবে কীভাবে সরকারী ক্ষেত্র এবং স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতাগুলি শিক্ষার ক্ষেত্রের উন্নতি এবং অব্যাহতিকে প্রভাবিত করে তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যদিও শিক্ষায় বেসরকারী খাতের অনেক হস্তক্ষেপ রয়েছে, তবে এই অধ্যয়নের ক্ষেত্রটি সরকারী খাতের জড়িত থাকার উপর জোর দেয়। তদ্ব্যতীত, এটি উচ্চ, তৃতীয়, বৃত্তিমূলক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার ক্ষেত্রের প্রসারকে অধ্যয়ন করে। শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান প্রচেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা এবং অগ্রগতির মাধ্যমে শিক্ষাকে উন্নতির প্রয়াস হিসাবে দেখায়। যেহেতু শিক্ষা যে কোনও সমাজের অন্যতম
প্রধান উদ্বেগ, এটি সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি প্রয়োজনীয় এবং মৌলিক উপ-ক্ষেত্র।
[ ] শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান :-
এই পদটি কমবেশি উপরোক্ত বর্ণিত ধারণাকে বোঝায় যদিও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান মূলত শিক্ষার ক্ষেত্রে সমাজতাত্ত্বিক ফলাফলের প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে এবং এটি বেশিরভাগ গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত থাকে। এখানে, শিক্ষাকে একটি প্রক্রিয়া সহ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখা হয় এবং শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট কার্য রয়েছে specific শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রের মান উন্নত করার জন্য পরামর্শ এবং পদ্ধতি সরবরাহ করে এবং এগুলি সাধারণত নির্দিষ্ট সমাজের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং মানদণ্ডের উপর গভীর গবেষণা বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই অধ্যয়নের মাধ্যমে, শিক্ষা বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলির জন্য প্রস্তুত করা এবং ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য নতুন ক্রিয়াকলাপ পরিকল্পনা করা সহজ বলে মনে করেন। সুতরাং, শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গভীর পরীক্ষা জড়িত এবং এটি বেশিরভাগই শিক্ষার ক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যক্তিদের উপকার করে।
শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান এবং শিক্ষার
সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য:-
1) সংজ্ঞা:-
শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হ'ল পাবলিক ইনস্টিটিউট এবং মানুষের অভিজ্ঞতা কীভাবে শিক্ষার ক্ষেত্র এবং এর ফলাফলগুলিকে প্রভাবিত করে তার গবেষণা study
শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান হ'ল শিক্ষায় সমাজতাত্ত্বিক
শিক্ষাবিজ্ঞানের বিবর্তন শিক্ষাবিষয়ক সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা শিক্ষাবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা শিক্ষার দুটি শাখা যা কখনও কখনও অনুসন্ধানের প্রয়োগ।
2) থিওরি বনাম অনুশীলন:-
শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি তাত্ত্বিক ক্ষেত্র।
শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের আরও ব্যবহারিক প্রভাব রয়েছে।
3) জোর:-
শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান: একজন ব্যক্তির শিক্ষার অর্জন বা শেষ ফলাফলের উপর আরও জোর দেওয়া হয়।
শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান: এটি গবেষণা কাজের মাধ্যমে কীভাবে শিক্ষার উন্নতি হতে পারে এবং ভবিষ্যতের
উপকারের জন্য নতুন পরিকল্পনা এবং ক্রিয়াকলাপ সন্ধানের চেষ্টা করার উপর জোর দেয়।
Comments
Post a Comment
If you have any doubts, let me know or write us Kajemshaikh0365@gmail.com