প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা , বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব।
BY
KAJEM SHAIKH
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা :-
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণাটি মার্কিন সমাজতত্ত্ববিদ চার্লস হর্টন কুলির চিন্তাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে দেখা যায়। প্রত্যেক সমাজেই প্রাথমিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব দেখা যায়। প্রাথমিক গোষ্ঠীকে সমস্ত সংগঠনের নিউক্লিয়াস হিসাবে কল্পনা করা হয়ে থাকে। অধ্যাপক কুলি সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে এই প্রাথমিক গোষ্ঠী কথাটি ব্যবহার করেন।
প্রাথমিক গোষ্ঠী হল এমন একটি গোষ্ঠী যা তার সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক , পারস্পরিক সহযোগিতা ও সাহচর্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে মিশে থাকে ঘনিষ্ঠতা - অন্তরঙ্গতা। এই অন্তরঙ্গতা তার সদস্যদের মধ্যে গভীর '' আমরা বোধ '' সঞ্চারিত করে। এই আমরা বোধ - ই হলো প্রাথমিক গোষ্ঠীর এক ও অখন্ড বৈশিষ্ট্যের পরিচয়বাহী।
অর্থাৎ, প্রাথমিক গোষ্ঠী হল মুখোমুখি পরিচয়যুক্ত সদস্যদের সমষ্টি। সদস্যদের এই মুখোমুখি সম্পর্ক থাকে বলেই একে মুখোমুখি গোষ্ঠী বলে .সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আন্তরিক , ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তিনটি মুখ্য বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এগুলি হল -
১. সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক ,
২. সহযোগিতার সম্পর্ক ও
৩. আমরা বোধ।
এছাড়াও তিনি আনুগত্যের আবেগ , পরিচয় নির্ধারণ , বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক - প্রভৃতির কথাও বলেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , বটোমরের '' মুখ্য গোষ্টি '' কথাটি প্রাথমিক গোষ্ঠীরই সমার্থক। প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী হল সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত , যার মধ্যে সদস্যরা একে অন্যের সাথে প্রত্যক্ষ আচার ব্যবহার করে থাকে। তিনি আরো বলেছেন , প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী , তা স্বল্পস্থায়ী বা স্থায়ী হোক , সামাজিকীকরণের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনের মৌল উপাদান হলো প্রাথমিক গোষ্ঠী। পরিবার , খেলার সঙ্গী , খেলার গোষ্ঠী , অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী - এই জাতীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য :-
১. প্রাথমিক সম্পর্ক :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর অপরিহার্য বিষয়ই হলো তার সদস্যদের প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সম্পর্ক। প্রত্যক্ষ যোগাযোগই প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। এই সম্পর্ক সাধারণত এক ও অভিন্ন।
২. উদ্দেশ্যের অভিন্নতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্দেশ্য ও মনোভাব কমবেশি অভিন্ন ও সমজাতীয় হয়ে থাকে। সদস্যরা তাদের এই অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সমবেতভাবে সচেষ্ট হয়। অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস - এর মতে , প্রাথমিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের উদ্দেশ্যগত অভিন্নতা গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের এক মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য সৃষ্টি করে।
৩. সম্পর্কের স্বকীয়তা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনরূপ স্বার্থচিন্তা থাকেনা। এই সম্পর্ক কোনরূপ আর্থিক লাভ-ক্ষতির উপরে নির্ভর করে গড়ে ওঠেনা। ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা বা শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্য পূরণের চিন্তা এই জাতীয় সম্পর্কের মধ্যে থাকে না। স্বামী স্ত্রীর প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্ক এই প্রাথমিক সম্পর্কের অন্যতম উদাহরণ।
৪. ব্যক্তিগত সম্পর্ক :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যগনের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রকৃতির। কোনো বিধিবদ্ধতার বেড়াজালে এই সম্পর্ক আবদ্ধ নয়। এই সম্পর্কের মধ্যে আন্ত মানবিক কোমল হৃদয়বৃত্তির উন্মোচিত হওয়ার প্রয়োজনীয় উপাদান বর্তমান থাকে।
৫. সম্পর্কের গভীরতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। যেহেতু এই সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরতা প্রাপ্ত হয় , সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিশে থাকে প্রেম - ভালোবাসা , শ্রদ্ধা - সহানুভূতি , সহযোগিতা - পরার্থচিন্তা প্রভৃতি মানবিক বিষয়াদি।
৬. স্বতস্ফূর্ততা :- প্রাথমিক সম্পর্ক হল সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। ব্যক্তি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি অন্যের সাথে প্রাথমিক সম্পর্ক তৈরি করে না। তাছাড়া এই সম্পর্ক পরিকল্পনামাফিকও হয়না।
৭. আয়তনে ক্ষুদ্রতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠী মূলত ক্ষুদ্র আকৃতির হয়। গোষ্ঠীর আয়তন যত ক্ষুদ্র হয় প্রাথমিক সম্পর্কও তত গভীর হয়ে থাকে। আসলে , যেহেতু প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি জরুরি , এই দৈহিক নৈকট্য তখনই সম্ভব হয় যখন সদস্যরা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকে।
৮. দৈহিক নৈকট্য :- প্রাথমিক গোষ্ঠীকে মুখোমুখি গোষ্ঠীও বলা হয়। ''মুখোমুখি'' বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তিদের দৈহিকভাবে কাছাকাছি অবস্থানকে। প্রাথমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্টটি অবধারিতভাবে বর্তমান
৯. স্থায়িত্ব :- প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি মোটামুটিভাবে স্থায়ী হয়। প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন হয়। এই অনেকটা সময় গোষ্ঠী স্থায়িত্ব প্রমাণে যথেষ্ট।
১০. সদস্যদের অভিন্নতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে মিল দেখা যায়। এদের সামাজিক পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ড কমবেশি একই প্রকার হয়ে থাকে। তাদের সংস্কৃতি , বুদ্ধিবৃত্তি , চিন্তা-চেতনা , সামাজিক মান - মর্যাদা , মানসিকতা , জীবনযাত্রা প্রভৃতি একই জাতীয় হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে সহজে ঐক্যবোধ , আন্তরিকতা , একাত্মতা , সহযোগিতা প্রভৃতি সহজেই গড়ে উঠতে পারে।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর গুরুত্ব :-
১. প্রাথমিক গোষ্ঠী হল সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মানুষের সামাজিক প্রকৃতির উন্মেষ ঘটায় প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিই। প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির তত্ত্বাবধানে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মানুষ সামাজিক জীব হয়ে ওঠে।
২. মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুলির মতানুসারে , প্রাথমিক গোষ্ঠী হল ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মুখ্য রূপকার। তার বক্তব্য অনুযায়ী , মানুষের সামাজিক প্রকৃতি ও আদর্শের নিরূপণে প্রাথমিক গোষ্ঠীর মৌলিক ভূমিকা বর্তমান। বস্তুতঃ ব্যক্তিমানুষের প্রেম-প্রীতি , ন্যায়-নীতি , মূল্যবোধ প্রভৃতি ব্যক্তিত্বের উপাদানগুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমেই উন্মোচিত ও বিকশিত হয়। এটিকে অনেকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের মুক্তাঙ্গণ হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন।
৩. আমাদের মানসিক চাহিদাগুলির পরিতৃপ্তি ঘটায় প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিই। প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবেই ব্যক্তি তার আনন্দ , নিরাপত্তা , সাহচর্য প্রভৃতি মানসিক অনুভূতি গুলি পেয়ে থাকে। তাছাড়া আবেগ , দুঃখ , যন্ত্রণা , মনের ভাব ইত্যাদি সে তার সদস্যদের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ পায়। এ বিষয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশ পায় প্রাথমিক গোষ্ঠীর মধ্যেই। এর দ্বারাই মানুষের স্নেহ , প্রেম , শ্রদ্ধা , ভালোবাসা , সহানুভূতি , সহমর্মিতা প্রভৃতি সুকুমারবৃত্তি গুলি উন্মোচিত - চর্চিত ও পরিশীলিত হয়ে থাকে।
৪. প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা গভীরভাবে '' আমরা বোধ ''- এ উদ্বুদ্ধ। এই আমরা বোধই তাকে অন্যের ভালো-মন্দ বুঝতে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রণোদিত করে। এইভাবে প্রাথমিক গোষ্ঠীর সাহায্যেই ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা থাকলে তা সংশোধিত হয়।
৫. প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা যৌথভাবে বহুবিধ ও উদ্দেশ্য পূরণে সচেষ্ট হয়। এই যূথবদ্ধতা ব্যক্তিকে গোষ্ঠীর স্বার্থ পূরণের ব্যাপারে প্রেরণা , উৎসাহ - উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে।
৬. প্রাথমিক গোষ্ঠী তার সদস্যদের মধ্যে দলীয় মনোভাব জাগ্রত করে।
৭. প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই ব্যক্তিমানুষের হৃদয়ের কোমল প্রবৃত্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে।
৮. প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই মানুষের নানাবিধ শারীরিক , সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। ব্যক্তিমানুষের নানাবিধ সমস্যা সে খোলামনে ওই গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের কাছে বলতে পারে। যেহেতু সদস্যরা একে অপরের সম্পর্কে গভীরভাবে সহানুভূতিশীল ও সহযোগি , তাই এসব সমস্যা সমাধানে অন্যান্যরাও সহযোগিতা করে থাকে। এইভাবে ব্যক্তির নানাবিধ সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৯. প্রাথমিক সদস্য হিসাবে ব্যক্তির মনে এই ধারণা জন্মায় যে , সে সমাজে একা বা অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সে অনুভব করে সে তার বিপদে , দুঃখে অন্যের সহযোগিতা পাবে। প্রাথমিক গোষ্ঠী এভাবেই তার কোনো সদস্যকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।
১০. প্রাথমিক গোষ্ঠীর বেশ কিছু নিয়মকানুন থাকে। এগুলো তার সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেমন মেনে চলে , তেমনি কোনো না কোনো নিয়ম তার সদস্যদের মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। এই নিয়ম বিধি দ্বারা প্রাথমিক গোষ্ঠী একদিকে যেমন সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তি মানুষের আচার-আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে ; তেমনি অন্যদিকে ব্যক্তি মানুষকে নিয়মানুবর্তী হতে শেখায়।
উপভাষা কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি?? তাদের সীমানা নির্ধারণ কর।
ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য ও অংশ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য 1st semester 1 ও 2 paper suggetion
পারিভাষিক শব্দ কি বা কাকে বলে | পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও পরিভাষা তালিকা
ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি | dhoni poribortoner riti mcq|primary TET
ভারতীয় ভাষা পরিষদ l Bhartiya -arya Bhasha
জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । rabindra nath tagor jibon sriti
বরেন্দ্রী উপভাষার অঞ্চল বা এলাকা উল্লেখ করে এই উপভাষার রূপতাত্ত্বিক ও ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ।
সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা , বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব
প্রাথমিক গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠীর পার্থক্য গুলো আলোচনা কর।
B.A. (Hons.) Bengali, Bachelor of Arts Honours in Bengali, Syllabu…
WB TET Preparation Tips 2023, Study Material
Comments
Post a Comment
If you have any doubts, let me know or write us Kajemshaikh0365@gmail.com