প্রাচীন বাংলা, মধ্য বাংলা ও আধুনিক বাংলার লক্ষণগুলি আলোচনা কর। বাংলা ভাষার স্তরগুলোকে ক’টি ভাগে ভাগ করা যায় ? সেই স্তরগুলোর সময়সীমা নির্দেশ কর।
Published By- STUDYCARE(KAJEM SHAIKH)
বাংলা ভাষার স্তরগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
(১) প্রাচীন বাংলা
(২) মধ্য বাংলা
(৩) আধুনিক বাংলা।
প্রাচীন বাংলা (৯৫০-১৩৫০খ্রীষ্টাব্দ) দশম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কাল। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল হল মধ্য বাংলা। আধুনিক বাংলার আরম্ভ হয়েছে উনিশ শতক থেকে। এযুগের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল গদ্য সাহিত্য।
আদিযুগের বাংলা ভাষার প্রধান নিদর্শন নেপাল রাজদরবার থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কৃত চর্যাপদগুলি। ধর্মদাসের ‘বিদগ্ধমুখমণ্ডল, সর্বানন্দের ‘টীকা সর্বস্ব’ এবং সংকলন গ্রন্থ ‘সেকশুভোদয়া’র কয়েকটি পদে প্রাচীন বাংলা ভাষার কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল হল বাংলা ভাষার মধ্যযুগ। এযুগের বাংলা ভাষার দু’টি সুস্পষ্ট স্তর আছে. আদি মধ্যযুগ (১৩৫১-১৬০০খ্রীঃ) এবং অন্তমধ্যযুগ (১৬০১-১৮০০খ্রী:) বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন আদিমধ্যযুগের বাংলার নিদর্শন। চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যপরবর্তী বাংলা সাহিত্য অন্তমধ্যযুগের বাংলা ভাষার নিদর্শন। আধুনিক যুগ আরম্ভ হয়েছে উনিশ শতক থেকে। এযুগের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল গদ্য সাহিত্য।
প্রাচীন বাংলার লক্ষণ:-
প্রাচীন অর্থাৎ আদি স্তরের বাংলায় চর্যাগীতির ভাষা অনুসারে – এই বিশেষত্বগুলি দেখা যায়-
1.সম যুগ্ম ব্যঞ্জন একক এবং পূর্ববর্তী হ্রস্বধ্বনি দীর্ঘ হল। নাসিক্যযুক্ত ব্যঞ্জনে পূর্বস্বর দীর্ঘ হল। নাসিক্য ব্যঞ্জন ক্ষীণ হয়ে সানুনাসিক স্বরধ্বনিতে পরিণত হতে চলল। যেমন, ধর্ম > ধাম, জন্ম > জাম, বৃক্ষ > রুখ ইত্যাদি। অর্ধতৎসম শব্দে যুক্ত ও যুগ্ম ব্যঞ্জন থেকে গেল। যেমন মিথ্যা > মিচ্ছা।
2.পদান্তে স্বরধ্বনি বজায় ছিল, তবে অনেকসময় যুক্তস্বর (ই, অ), (ঈ, ই), কারে পরিণত হল। যেমন- ভণতি > ভণই, পুস্তিকা > পোখিঅ > পোথী ইত্যাদি।
3.য়-শ্রুতি এবং ব-শ্রুতি ছিল। যেমন, নিকটে > নিয়ড্ডি, নাবেন > নাবে ইত্যাদি।
4.এর, অর, রবিভক্তি দ্বারা সম্বন্ধপদ তৈরী হত। যেমন – রূখের তেশ্তলি, ডোম্বী এর সঙ্গে ইত্যাদি।
5.ক্, কে, রে বিভক্তির দ্বারা গৌণকর্মের ও সম্প্রদানের পদ তৈরী হত। যেমন- নাশক, রসানেরে ইত্যাদি।
6.ই. এ. হি. তে- এগুলি অধিকরণের বিভক্তি। যেমন- নিয়ড্ডী, ঘরে, হিঅহি ইত্যাদি।
7.অপাদানের অর্থে অধিকরণের অর্থ নিহিত থাকায় অপাদানের অর্থে অধিকরণের বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন জামে কাম কি কামে জাম।
8.অপাদানে অপভ্রষ্ট থেকে আগত হু-বিভক্তি আছে। যেমন- খেপহু, রঅণহুঁ ইত্যাদি।
9.করণের বিশিষ্ট বিভক্তি এ সপ্তমীর সঙ্গে প্রায় অভিন্ন হওয়ায় করণেও তেঁ, তে এতেঁ বিভক্তি দেখা গেল। যেমন – মতিএ, সুখদুখেতে ইত্যাদি।
10.সংস্কৃত বহুবচন থেকে আগত ‘আহ্মে’, ‘তুহ্মে’ দুটি একবচনেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
মধ্য বাংলার লক্ষণ:-
মধ্যস্তরের বাংলায় দুটি সুস্পষ্ট উপস্তর দেখা যায় আদিমধ্য আর অন্তমধ্য। আদিমধ্য বাংলার স্থিতিকাল আনুমানিক ১৩৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৪৫০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত। অন্ত মধ্য বাংলার স্থিতিকাল ১৬০১ থেকে ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত। অন্ত মধ্য বাংলার স্থিতিকাল ১৬০১ থেকে ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত।
A.আদি মধ্য বাংলার প্রধান বিশেষত্ব –
1.আ-কারের পরস্থিত ই-কার ও উ-কার ধ্বনির ক্ষীণতা এবং পাশাপাশি দুই স্বরধ্বনির স্থিতি। যেমন বড়াই > বড়া’,
আউলাইল > আ’লা’ল।
2.মহাপ্রাণ নাসিক্যের মহাপ্রাণতার লোপ অথবা ক্ষীণতা। যেমন কাহ্ন> কান, আহ্মি > আমি।
3.রা-বিভক্তির যোগে সর্বনামের কর্তৃকারকের বহুবচন পদ সৃষ্টি। যেমন আহ্মারা, তারা ইত্যাদি।
4.ইল-অন্ত অতীতের এবং ইব-অন্ত ভবিষ্যতের কর্তৃবাচ্যে প্রয়োগ। যেমন- মো শুনিলো, মোই করিবোঁ ইত্যাদি।
5.প্রাচীন ইঅ, – বিকরণযুক্ত কর্মভাব-বাচ্যের ক্রমশ লোপ এবং যা ও ভূ ধাতুর সাহায্যে যৌগিক কর্মভাব বাচ্যের সমধিক প্রচলন। যেমন- সে কথা কহিল নয়
6.অসমাপিকার সাথে ‘আছ’ ধাতুর যোগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠন। যেমন – লইছে > লই + (আ) ছে।
7.‘গিয়া’ ও ‘সিয়া’
– এই দুই অসমাপিকা ক্রিয়াপদে অনুসর্গরূপে ব্যবহার। যেমন- দেখ গিয়া > দেখগে, দেখসিয়া > দেখসে ইত্যাদি।
8.ষোলমাত্রার পাদাকুলক- পজঝটিকা থেকে চৌদ্দ মাত্রার পয়ারের বিকাশ।
B.অন্ত-মধ্য বাংলার প্রধান বিশেষত্ব –
1.অন্ত্যস্বরের লোপ এবং মধ্যস্বরের লোপপ্রবণতার ফলে দ্বিমাত্রিকা দেখা দিল। এই সূত্রে ধ্বনিপদ্ধতি খানিকটা সরল হল।
2.সাধু ও চলিত ভাষায় ঢ়-কারের এবং কিছু নাসিক্য মহাপ্রাণের মহাপ্রাণতার লোপ। যেমন আহ্মার > আমার, কাহ্ন > কান।
3. পদান্ত অ-কারের লোপ প্রবণতা। যেমন- ভাত > ভা।
4.ইআ > এ্যা. এ; উআ > ও। যেমন- বানিয়া > বান্যা > বেনে; সাথুয়া > সেথো।
5.বিশেষ্য কর্তার বহুবচনে রা-বিভক্তি নির্দেশক বহুবচনে গুলা, গুলি বিভক্তি, তির্যক কারকের বহুবচনে দি, দিগ বিভক্তি। এই বিভক্তিগুলি আশলে পদ ছিল।
6.ইউ-অন্ত কর্মভাব বাচ্যের অনুজ্ঞার লোপ।
7.ইল এবং ইব-অন্ত ক্রিয়াপদের সম্পূর্ণভাবে কর্তৃবাচ্যে প্রয়োগ। যেমন মই করিল, তেঁ করিব ইত্যাদি।
8.আহ্-ধাতুর যোগে যৌগিক কালের বহুল প্রয়োগ। যেমন – আসিতেছে, আসিয়াছিল ইত্যাদি।
9.কোন একটিমাত্র ক্রিয়াপদের পরিবর্তে একাধিক ক্রিয়াপদের প্রয়োগ অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে বাংলায় চলে এসেছে। যেমন – ‘জিনা’ অর্থ জয় করা।
10.সংস্কৃত তৎসম শব্দের নামধাতুরূপে ব্যবহার। যেমন – মনস্করিলা, নিমন্ত্রিয়া ইত্যাদি।
আধুনিক বাংলার লক্ষণ:-
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে বাংলার আধুনিক স্তরের আরম্ভ। এই স্তরের প্রধান লক্ষণ :
1.লিখার ভাষা মুখের ভাষা থেকে আলাদা হয়ে সাধুভাষারূপে সাহিত্যের একমাত্র বাকরীতি হয়ে দাঁড়াল।
2.পশ্চিমবঙ্গের ভাষায় পদমধ্যবর পাশাপাশি দুই স্বর সন্ধিবদ্ধ হয়ে শেষ স্বরের পরিবর্তন ঘটাল। যেমন করিয়া > কইর্যা > করে।
3.পশ্চিমবঙ্গের কথ্যভাষায় সাধারণভাবে স্বরসঙ্গতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন – জলুয়া > জলো।
4.আ-কারান্ত কোন কোন নিজন্ত ধাতুর রূপ অনিজন্ত হয়ে গেল। যেমন খেলা > খেল।
5.সাধুভাষায় যুক্ত ক্রিয়াপদের ব্যবহার। যেমন- দান করা, গান করা ইত্যাদি।
6.ভাববচন শব্দের সঙ্গে ‘পূর্বক’ অথবা ‘করতঃ’ যোগ করে অসমাপিকার অর্থে ব্যবহার। যেমন – গমন-পূর্বক, শ্রবণ করতঃ ইত্যাদি।
7.ফারসী ‘ব’
(Wa) থেকে জাত ‘ও পদের ও বাক্যের সংযোজকরূপে ব্যবাহর। যেমন রাম ও শ্যাম।
8.না-বোধক শব্দ সমাপিকা ক্রিয়াপদের পূর্বে না বসে পরে বসা। যেমন যাবেনা; সে না খায় না খাবে।
9.অসমাপিকা ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে একাধিক বাক্যকে একটি সরল বাক্যে প্রকাশ করা। যেমন- সে সেখানে গিয়া দেখিয়া অবাক হইল।
10অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রচুর ফারসী শব্দ গৃহীত হয়েছিল। উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে ইংরেজীর প্রভাব বৃদ্ধি পেল এবং তা সহজে বাংলা ভাষায় ঢুকে গেল। যেমন- আপিল, লাট, বেঞ্চি ইত্যাদি।
প্রাচীন বাংলা, মধ্য বাংলা ও আধুনিক বাংলার লক্ষণগুলি আলোচনা কর।বাংলা ভাষার স্তরগুলোকে ক’টি ভাগে ভাগ করা যায় ? সেই স্তরগুলোর সময়সীমা নির্দেশ কর।
MORE RELATED POSTS
উপভাষা কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি?? তাদের সীমানা নির্ধারণ কর।
ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য ও অংশ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য 1st semester 1 ও 2 paper suggetion
পারিভাষিক শব্দ কি বা কাকে বলে | পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও পরিভাষা তালিকা
ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি | dhoni poribortoner riti mcq|primary TET
ভারতীয় ভাষা পরিষদ l Bhartiya -arya Bhasha
জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । rabindra nath tagor jibon sriti
বরেন্দ্রী উপভাষার অঞ্চল বা এলাকা উল্লেখ করে এই উপভাষার রূপতাত্ত্বিক ও ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ।
সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা , বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব
প্রাথমিক গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠীর পার্থক্য গুলো আলোচনা কর।
সামাজিকীকরণ কি l samajikikoron ki সামাজিকীকরণ কি l samajikikoron ki l সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা
prathomik ghostir songa o boisisto in bengali l প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা , বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব।
সামাজিক পরিবর্তন কাকে বলে? সামাজিক পরিবর্তনের উপাদানসমূহ আলোচনা করো।
সামাজিক স্তরবিন্যাস কী? সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন কী কী?
সামাজিক পরিবর্তনের কারণসমূহ আলােচনা কর।
বর্ণপ্রথার বৈশিষ্ট্য কী? 'বর্ণ' ও ‘জাতি'-র ধারণার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।
B.A. (Hons.) Bengali, Bachelor of Arts Honours in Bengali, Syllabu…
WB TET Preparation Tips 2023, Study Material
Philosophy Short Essay Questions | My Best Writer
Videosহাট্টিমাটিম টিম - Hattimatim Tim and more | Bengali Rhymes Collection -1
করোনা l coronavirus l সময়ে বিদ্যালয়ের অবস্থা । পার্ট-1
করোনা l coronavirus l সময়ে বিদ্যালয়ের অবস্থা । পার্ট -2
Classes
Mock Tests
Crack Exams
Website Links click here
Terms & Conditions Privacy Policy
STUDY CARE
Whatsapp Ask a Doubt
Studycare0365.blogspot.com
Jangipur,Murshidabad
West Bengal, 742213
Call +91 7908497874
Kajemshaikh0365@gmail.com
Site Links
• About Us
Top Exams
• UPSC Exams
• Teaching Jobs
• Railway Exams
• Banking Exams
Comments
Post a Comment
If you have any doubts, let me know or write us Kajemshaikh0365@gmail.com